অনলাইন ডেস্ক।।
গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। কয়েকদিন দেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল সেনাবাহিনীর হাতে, তবে সামরিক শাসন জারির পথে হাঁটেনি তারা। বরং সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর উদ্যোগ নেন।
সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নাকি অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে চাননি। তার ভাষায়, "সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটো ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনুস কেন? অন্য কেউ কেন নয়? ইউনুসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। কনভিক্টেড ব্যক্তি কীভাবে একটি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন?’"
আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। তার মতে, সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, "আওয়ামী লীগ একজন ব্যক্তিকে একেবারেই মেনে নিতে পারছে না এবং দেশের ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। তাহলে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মতামত উপেক্ষা করে কীভাবে তাকে প্রধান উপদেষ্টা করা যায়?"
এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে সরানোর ষড়যন্ত্র চলছে কি না।
সেনাপ্রধানকে সরানো হবে? সারজিস আলমের প্রতিক্রিয়া
এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা ও হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম ২২ মার্চ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেনাপ্রধানকে সরানোর সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সেনাবাহিনীর প্রধানকে সরানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং এখন এ নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা চাই না নির্বাচনের আগপর্যন্ত এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হোক। সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার ওপর আমাদের সবার আস্থা এবং শ্রদ্ধাবোধ আছে। আমরা এটি হারাতে চাই না।"
রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও সেনাবাহিনীর অবস্থান
বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেনাবাহিনী সরকারবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে নাকি নিরপেক্ষ থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সামরিক বাহিনী সরাসরি ক্ষমতা নেওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সামনের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অবস্থান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল আগামী দিনগুলোর রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণ করবে।