অনলাইন ডেস্ক।।
রমজান মাস শেষের পথে, কিন্তু মাস শেষ হওয়ার আগেই নতুন এক বিতর্ক ঘিরে ধরেছে মুসলিম বিশ্বকে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা ও ঈদুল ফিতরের নির্ধারণ। সৌদি আরবের চাঁদ দেখার ঘোষণা নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক ছিল, আর এবারও সেই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জ্যোতির্বিদদের পূর্বাভাস ও সৌদি আরবের অবস্থান
জ্যোতির্বিদরা বলছেন, ২৯ মার্চ শনিবার বিশ্বের কোথাও থেকে, এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকেও, শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখা যাবে না। জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে, চাঁদ দেখার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তবে সৌদি আরবের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, তারা এই বৈজ্ঞানিক তথ্য উপেক্ষা করে আগেভাগেই ঈদুল ফিতরের ঘোষণা দিতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব গেল কয়েক বছর ধরে এমন দিনেই ঈদের ঘোষণা দিচ্ছে, যখন চাঁদ দেখার বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা ছিল না। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও সৌদি আরব কখনো এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়নি।
চাঁদ দেখার পদ্ধতি ও মুসলিম বিশ্বে প্রভাব
মুসলিম বিশ্ব চন্দ্রবর্ষ অনুসারে ইসলামিক মাস নির্ধারণ করে। ২৯ বা ৩০ দিনের চন্দ্রমাস শেষ হওয়ার পর নতুন চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিছু দেশ নিজস্ব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চাঁদ দেখা নিশ্চিত করে, আবার কিছু দেশ সৌদি আরবের ওপর নির্ভরশীল। যেমন, যুক্তরাজ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চাঁদ দেখা কমিটি নেই, সেখানে সৌদি ঘোষণার সঙ্গে মিলিয়ে রোজা ও ঈদ পালন করা হয়। তবে এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
সৌদি আরব সাধারণত উম আল-কুরা নামের একটি বর্ষপঞ্জিকার ওপর ভিত্তি করে তারিখ নির্ধারণ করে। এই বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর ঈদুল ফিতর হবে ৩০ মার্চ, রোববার। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ২৯ মার্চ চাঁদ দেখা সম্ভব নয়, এমনকি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও নয়।
২০২৩ সালের বিতর্ক ও বর্তমান পরিস্থিতি
২০২৩ সালেও একই ধরনের বিতর্ক হয়েছিল। তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, সৌদির ঘোষণা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব নয়, কারণ সেই দিন চাঁদ দেখা সম্ভব ছিল না। তারা সৌদি আরবের কাছে চাঁদ দেখার প্রমাণ চেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এবারও একই ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমতাবস্থায় মুসলিম বিশ্বে বিভক্তি তৈরি হতে পারে। সৌদির ঘোষণার ওপর নির্ভর করে কিছু দেশ ৩০ মার্চ ঈদ উদযাপন করতে পারে, আবার অন্য দেশগুলো বিজ্ঞান ও স্থানীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ৩১ মার্চ বা ১ এপ্রিল ঈদ পালন করতে পারে।
সৌদি আরবের এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইসলামিক ক্যালেন্ডারের ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এবারও কি সৌদি আরব ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেবে? নাকি বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে? সেটিই এখন দেখার বিষয়।
কালের কন্ঠস্বর