অনলাইন ডেস্ক।।
কালের কন্ঠস্বর
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তীব্র আলোচনা ও মতপার্থক্য। নির্বাচন আদৌ হবে কি না, হলে কবে হবে—এই প্রশ্ন এখন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সভা–সমাবেশ—সবখানেই এখন এই নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিএনপি বলছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়, অন্যথায় তারা রাজপথে কর্মসূচিতে নামবে।
বিএনপির দাবি: রোডম্যাপ দিন, নির্বাচন দিন
বিএনপির শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যেই একাধিক বৈঠক করেছেন এবং আগামী ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। সেখানে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের ভাষায়, “নির্বাচনমুখী সংস্কার শেষ করে ভোট দিন। বড়-ছোট সংস্কার বলে সময়ক্ষেপণের যৌক্তিকতা নেই।”
বিএনপির অভিযোগ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে এবং এর পেছনে কিছু রাজনৈতিক দলের সমর্থন রয়েছে। বিশেষত জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুন পর্যন্ত সময় দেওয়ার পক্ষে।
সরকারপক্ষ বলছে, সংস্কারই অগ্রাধিকার
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান ও প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্যই তারা কমিশন গঠন করে রিপোর্ট সংগ্রহ করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। সরকারের মতে, বড় ধরনের সংস্কার হলে ভোট জুনে, ছোট সংস্কার হলে ডিসেম্বরে সম্ভব হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগেই জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সংস্কারের অগ্রগতির উপর নির্ভর করবে। আর সে কারণেই সরকার এখন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
জামায়াত ও এনসিপি কী বলছে?
জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এর পর আর যাওয়ার কারণ দেখি না।” একই কথা বলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই সংস্কার ও বিচারের কাজ শুরু করে নির্বাচন সম্ভব।”
তবে বিএনপির মতে, এই ‘সংস্কারের গল্প’ মূলত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল। তাদের আশঙ্কা, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দীর্ঘায়িত করা। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার পক্ষে প্রচারও দেখা যাচ্ছে।
ঐকমত্য কতটা সম্ভব?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। সরকার চায়, দলগুলোর মতামত নিয়েই নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে। কিন্তু বড় দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকায় সেই পথ খুব একটা সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা না পেলে রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো বলছে, দেশে এখন আন্দোলনের প্রয়োজন নেই, আলোচনার পথ খোলা রয়েছে।
এই অবস্থায় আগামী ১৬ এপ্রিল বিএনপি-প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে কী হয়, তার উপরেই নির্ভর করছে দেশের রাজনীতির আগামী পথরেখা।