অনলাইন ডেস্ক।।
কালের কন্ঠস্বর প্রতিবেদক
দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।
এই সংশোধনীর লক্ষ্য—বর্তমানে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার বাইরেও কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো সময় হালনাগাদ তালিকা প্রকাশের সুযোগ তৈরি করা। প্রস্তাবনাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপনের জন্য এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির বড় পদক্ষেপ
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে থাকে ইসি। তবে জাতীয় নির্বাচনের সময় যদি এ সময়সীমার আগে হয়, তাহলে হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
নতুন প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে ইসিকে যে কোনো সময় ভোটার তালিকা প্রকাশের আইনি ক্ষমতা দেওয়া হবে। এতে চলতি বছরের মধ্যেই নতুন তালিকা প্রকাশ করে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রায় ৪৩ লাখ ২৭ হাজার নতুন ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যাবে—যাদের অধিকাংশই তরুণ।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, চলতি হালনাগাদ কার্যক্রমে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৬ জন নতুন ভোটার, যা মোট ভোটারের প্রায় ৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বর্তমানে ১৮ বছরের বেশি বয়সী। বাকিদের বয়স আগামী বছরের ১ জানুয়ারির মধ্যে ১৮ পূর্ণ হবে।
আইন সংশোধনের প্রস্তাবের খুঁটিনাটি
ইসির আইন সংস্কার কমিটি ভোটার তালিকা আইনের ৩(জ) এবং ১১(১) ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটার যোগ্যতার তারিখ শুধু ১ জানুয়ারি নির্ধারণ না রেখে কমিশনের বিবেচনায় অন্য যে কোনো দিন নির্ধারণের সুযোগ রাখা হচ্ছে।
ধারা ১১-এর ১ উপধারায় প্রস্তাব করা হয়েছে, ‘০২ জানুয়ারি হইতে ০২ মার্চ পর্যন্ত’ সময়সীমার পর ‘অথবা কমিশন কর্তৃক স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত’ শব্দসমূহ যুক্ত করা। অর্থাৎ, ইসি চাইলে আগেই তালিকা প্রকাশ করতে পারবে এবং নতুন ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক সাড়া ও বিশেষজ্ঞ মতামত
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইসির প্রস্তাবনা পেলে তা সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এ বিষয়ে বলেন, "নতুন ভোটারদের তালিকাভুক্তির চিন্তা থাকলে সরকার তা ইতিবাচকভাবে দেখবে। জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ নেতৃত্ব দিয়েছে, তাই তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য সময়সীমা
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত যেকোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে বিবেচনায় হালনাগাদ তালিকায় নতুন ভোটারদের সময়মতো যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ইসির কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, যদি আইন সংশোধন না করা হয় এবং নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন হয়, তবে নতুন ভোটাররা ভোট থেকে বঞ্চিত হবেন। একইসঙ্গে যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের নামও তালিকায় থেকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
বর্তমানে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখের বেশি। এর মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ। হালনাগাদের পর এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই সময়োপযোগী আইন সংশোধনের মাধ্যমে তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা শুধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপূর্ণতা নয়, বরং আগামী নেতৃত্ব নির্বাচনে তাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার একটি মাইলফলক হতে পারে।