অনলাইন ডেস্ক।।
মাগুরার শ্রীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় আজ শনিবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে আদালত। মাত্র দুই মাস ১১ দিনের মাথায় আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা দেশের বিচারব্যবস্থায় এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ঘটনার বিবরণ
২০২৫ সালের ১ মার্চ রোজার ছুটিতে শিশুটি বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে আসে। ৬ মার্চ সে বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিশুটিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১৩ মার্চ মারা যায় সে।
আসামি ও অভিযোগ
শিশুটির মা ৮ মার্চ চারজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। অভিযুক্তরা হলেন—হিটু শেখ, তার ছেলে সজীব শেখ, রাতুল শেখ এবং স্ত্রী জাহেদা বেগম। তদন্তে হিটু শেখের বিরুদ্ধে ডিএনএ প্রতিবেদনসহ ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
তদন্তে উঠে আসে, ধর্ষণের পর শিশুটির গলা চেপে ধরা হয় এবং শরীরে ব্লেড দিয়ে আঘাত করা হয়। হত্যার পর পরিবার ঘটনাটি ‘জ্বীনের আঁছড়’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল।
বিচার প্রক্রিয়া ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য
মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদার কৌসুলি এহসানুল হক সমাজীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, “আমরা আদালতে প্রমাণ করেছি শিশুটির ধর্ষণ ও মৃত্যুর জন্য আসামিরাই দায়ী। সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।”
২৭ এপ্রিল থেকে ৮ মে’র মধ্যে ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ১৩ মে যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর বিচারক এম জাহিদ হাসান ১৭ মে রায়ের দিন ধার্য করেন।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা
এই ঘটনায় মাগুরা জেলাজুড়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কাজী লাবনী জামান বলেন, “এত দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
শিশুটির মা বলেন, “আমি চাই, আমার মেয়ের মতো আর কোনো শিশুকে যেন এমন নির্মম মৃত্যু বরণ করতে না হয়।”
জেলা আইনজীবী সমিতি মামলার আসামিপক্ষকে আইনি সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগর বলেন, “এই মামলা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুক, যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করতে সাহস না পায়।”
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিক্রিয়া
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “এই মামলায় আমরা দ্রুততম সময়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। এটি দেশের বিচার ও তদন্ত কার্যক্রমে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে পরিবার, সমাজ ও পুরো জাতি যেন এই বর্বর ঘটনার ন্যায়বিচার প্রত্যক্ষ করে—এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।