দেশ টিভি নিউজ এর মাধ্যমে জানা,ঢাকা ওয়াসা, এক সময় যেটি ছিল একটি প্রতিষ্ঠিত ও স্বচ্ছ সরকারি প্রতিষ্ঠান, এখন সেটি রেফারেন্সের মাধ্যমে নিয়োগের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চাকরি প্রাপ্তির জন্য পরীক্ষার বদলে চলছে ব্যক্তি বিশেষের সুপারিশের প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা প্রকাশ্য পরীক্ষা ছাড়াই হাজার হাজার তরুণ-তরুণী চাকরি পাচ্ছেন।
এমন একটি বিতর্কিত ঘটনা সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রাতারাতি ১৫০ জনকে বিভিন্ন জোনে চাকরি দিয়েছে, এবং অধিকাংশ নিয়োগই হয়েছে একাধিক ব্যক্তির রেফারেন্সে। নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের, যেমন পিএস (প্রেস সেক্রেটারি) এবং এপিএস (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি) মোয়াজ্জেমের নাম পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নামও রেফারেন্সদাতাদের তালিকায় যুক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে সমন্বয়ক তৌহিদ, নুসরাত তাবাসসুম, এবং নাজমুলের নাম রেফারেন্সদাতার তালিকায় দেখা গেছে। তবে, তৌহিদ নিজে দাবি করেছেন যে, তিনি কোনো ধরনের সুপারিশ করেননি। এ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—তাহলে কি ওয়াসা কর্তৃপক্ষই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কিছু বিশেষ ব্যক্তি বা গ্রুপের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে?
একটি সংবাদ টিম ওয়াসার জোন ৬-এ প্রবেশ করতে গেলে, সেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের বাধা দেয়। প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার পরও, চাকরি প্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমনকি, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, রেফারেন্সদাতা সমন্বয়কদের নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ চাকরিপ্রাপ্তই কল কেটে দেন।
এ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়, যখন ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান দাবি করেন, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া করেছেন ওয়াসার এমডি, এবং তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন। তবে, বিস্তারিত জানতে চাইলে সচিবের পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রকাশ করা হয়।
সমস্যার অন্তরালে:
এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, ঢাকা ওয়াসার মতো প্রতিষ্ঠানে এমন অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া কীভাবে সম্ভব? যখন মেধা, যোগ্যতা বা পরীক্ষার জায়গায় রেফারেন্সই হয়ে উঠেছে প্রধান নিয়ামক, তখন সাধারণ জনগণের কাছে এটি দুর্নীতির একটি নতুন রূপ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। যা তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি গভীর হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে, দেশের শিক্ষা ও চাকরির বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সমাজের ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার পক্ষে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।