দুপুরের কড়া রোদ্দুরে মাথায় গলে পড়ছিল, কিন্তু কোনো এক মুহূর্তে রিকশাচালক আবুল মিয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরাতন স্মৃতির সামনে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ময়মনসিংহের রাস্তায় রিকশা চালানো আবুল মিয়া একসময় এই শহরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র, পূরবী সিনেমা হলের নিয়মিত দর্শক ছিলেন। তাঁর স্মৃতিতে, সেই ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমাটি এক অমূল্য রত্নের মতো ছিল। সে সময় ছবিটি টানা ১০ বার দেখেছিলেন। রিকশাচালক আবুল মিয়া জানান, “মায়ের বানানো গোবরের লাকড়ি বিক্রি করে সিনেমা দেখেছি। ভিড় দেখে মনে হতো, এমন ভিড় অন্য কোনো সিনেমাতে আমি কখনও দেখিনি।”
এখন, শহরের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পূরবী সিনেমা হলের দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে। একটি সময় যেখানে হাজারো মানুষের পদচারণা ছিল, সেখানে এখন গোঁজ হয়ে পড়েছে ধ্বংসের শব্দ। কাজ চলছে, দেয়াল ভাঙা হচ্ছে, আর আস্তে আস্তে সেই স্মৃতিময় স্থানটি যেন মুছে যাচ্ছে। মালিকপক্ষ জানায়, হলটির দর্শক সংখ্যা এতটা কমে গিয়েছিল যে, অর্থনৈতিকভাবে এটি পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। একসময় যেখানে প্রতিটি শো ছিল পূর্ণ, সেখানে এখন শো বন্ধ থাকার মতো অবস্থা হয়েছে।
এছাড়া, ২০০২ সালে শহরের অন্যান্য সিনেমা হলের মতো পূরবীও ছিল এক ভয়াবহ বোমা হামলার শিকার। এরপর থেকেই দর্শকসংখ্যা কমতে শুরু করে এবং করোনার পর থেকে তা আরও তীব্র হয়। সিনেমার মানও দৃষ্টিকটুভাবে কমে যায়, যা দর্শকদের আকর্ষণ হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে, মালিকপক্ষের পরিকল্পনা হলো সিনেমা হলের জায়গায় একটি নতুন সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা। কিন্তু অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই ধরনের “সিনেপ্লেক্স” নির্মাণের নামে সিনেমা হলের ঐতিহ্য মুছে গিয়ে সেখানে প্রসাধনীর দোকান বা মোবাইল শপের মতো ব্যবসা গড়ে উঠবে।
এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রাক্তন দর্শকরা জানাচ্ছেন, এতদিন পর সিনেমা হলের ভাঙা দেখতে তাদের মন খারাপ হলেও, ব্যবসার ক্ষতি মেটানোর জন্য মালিকদের সিদ্ধান্তকে তারা কিছুটা বোধগম্য মনে করছেন। আর রিকশাচালক আবুল মিয়া, তাঁর আক্ষেপে বলেন, “এই শহরের আকাশে এখন আর সেই সিনেমার জোয়ার নেই। শুধু স্মৃতি রয়ে গেছে।”
তবে, পূরবী সিনেমা হলের মতো শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে, যেখানে একসময় সিনেমা আর সংস্কৃতির জোয়ার ছিল, সেখানে আজ শুধুই অবহেলা আর ধ্বংসের ছায়া।
ফজর | ০৪:০৭ ভোর | |
---|---|---|
যোহর | ১১:৫৭ দুপুর | |
আছর | ০৩:২৩ বিকাল | |
🌇 | মাগরিব | ০৬:২৭ সন্ধ্যা |
এশা | ০৭:৪৮ রাত | |
জুম্মা | ১১:৫৭ দুপুর |